ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্নীয়-স্বজনদের দেয়া ৫-১০ টাকা উপহার জমিয়ে সফল খামারি ময়না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৪৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উদ্যমী এক সাহসী নারী শাহনাজ খাতুন ময়না। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউপির বহবের ভিটা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে। একজন সফল খামারি হিসেবে নিজেকে সফল নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছেন হাঁস-মুরগি পালন।

চার ভাই-বোনের মধ্যে শাহনাজ খাতুন ময়না সবার ছোট। সে ছোট বলেই তার বাবা-মা, ভাই-বোনরা ভালোবেসে ময়নাকে খুশি করতে ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঁচ-দশ টাকা উপহার দিতো। ময়না সেই টাকা জমিয়ে রাখেন।

২০০৭ সালের মার্চ মাসে স্থানীয় আজগর আলীর বাড়িতে ১০দিন মেয়াদি গ্রাম ভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাদের হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ক যুগোপযোগী বক্তব্য শুনে হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালনে উৎসাহী হয়ে ওঠেন ময়না।

এরপর ২০১২ সালের মার্চ মাসে আনসার-ভিডিপি একাডেমি গাজীপুরের সফিপুর হতে ৪২দিন মেয়াদী সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ময়না। সেখানেও তিনি আত্মকর্মসংস্থানে বিষয়ে অনুপ্রাণিত হন।

আত্ম কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে গাইবান্ধার এসএম ব্যারাকে আনসার-ভিডিপি বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪২দিন মেয়াদি পেশা ভিক্তিক বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।

তিনি ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসা হতে কামিল পাশের মাধ্যমে একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করেন। পরে তিনি তার জমানো টাকার এক হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে স্বল্প পরিসরে হাঁস-মুরগি ও কবুতর চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

এরপর ২০১৯ সালের শুরুতে এক হাজার পাঁচশ  টাকার তহবিল নিয়ে ৬০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করেন। উদ্দীপন এনজিও থেকে বিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করতে ২০০ বাচ্চা কিনেন।

এরপর ২০১৯ সালের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে আরো ৭০০০ টাকা ব্যয়ে ২০০ বাচ্চা ক্রয় করে তার খামারের পরিধি বাড়ে। এর সঙ্গে বাড়িতে কবুতরও পালন শুরু করেন তিনি। এখন তার কবুতরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫টিতে।

শাহনাজ খাতুন ময়না জানান, হাঁস-মুরগির খামারের সঙ্গে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হতে চাই। এছাড়াও সহকারি মৌলভী পদে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করেছি। নিজের আয়ের বিকল্পপন্থা হিসেবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দাশেরহাটে অবস্থিত কুড়িগ্রাম হোমিওপ্যাথি কলেজে ভর্তি হয়েছি।

জানুয়ারিতে ডিপ্লোমা কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। নিজেকে দেশ সেবায় নিয়োজিত করতে ২০১৯ সালের জুন মাসে চিলমারী উপজেলার মহিলা আনসার প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। নারী আনসার প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

শাহনাজ খাতুন ময়না আরো বলেন, একজন সফল খামারি ও সফল নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ প্রকাশ করতে চাই। আমার এই আত্মকর্মসংস্থানে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সবার সহযোগিতা চাই।

জেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, নারীরা সহজে এমন আত্ম কর্মসংস্থানে উদ্যোমী কম হয়।

শাহনাজ খাতুন ময়না আত্মকর্মসংস্থানের যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে তিনি ভবিষ্যতে দেশে একজন আত্মকর্মসংস্থানের নারী মডেল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করবেন।

তিনি শাহনাজ খাতুন ময়নার ভবিষ্যত উজ্জ্বল কামনা ও তাকে সহযোগিতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আত্নীয়-স্বজনদের দেয়া ৫-১০ টাকা উপহার জমিয়ে সফল খামারি ময়না

আপডেট টাইম : ০৩:৪৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উদ্যমী এক সাহসী নারী শাহনাজ খাতুন ময়না। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউপির বহবের ভিটা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে। একজন সফল খামারি হিসেবে নিজেকে সফল নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছেন হাঁস-মুরগি পালন।

চার ভাই-বোনের মধ্যে শাহনাজ খাতুন ময়না সবার ছোট। সে ছোট বলেই তার বাবা-মা, ভাই-বোনরা ভালোবেসে ময়নাকে খুশি করতে ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঁচ-দশ টাকা উপহার দিতো। ময়না সেই টাকা জমিয়ে রাখেন।

২০০৭ সালের মার্চ মাসে স্থানীয় আজগর আলীর বাড়িতে ১০দিন মেয়াদি গ্রাম ভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাদের হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ক যুগোপযোগী বক্তব্য শুনে হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালনে উৎসাহী হয়ে ওঠেন ময়না।

এরপর ২০১২ সালের মার্চ মাসে আনসার-ভিডিপি একাডেমি গাজীপুরের সফিপুর হতে ৪২দিন মেয়াদী সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ময়না। সেখানেও তিনি আত্মকর্মসংস্থানে বিষয়ে অনুপ্রাণিত হন।

আত্ম কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে গাইবান্ধার এসএম ব্যারাকে আনসার-ভিডিপি বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪২দিন মেয়াদি পেশা ভিক্তিক বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।

তিনি ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসা হতে কামিল পাশের মাধ্যমে একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করেন। পরে তিনি তার জমানো টাকার এক হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে স্বল্প পরিসরে হাঁস-মুরগি ও কবুতর চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

এরপর ২০১৯ সালের শুরুতে এক হাজার পাঁচশ  টাকার তহবিল নিয়ে ৬০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করেন। উদ্দীপন এনজিও থেকে বিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করতে ২০০ বাচ্চা কিনেন।

এরপর ২০১৯ সালের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে আরো ৭০০০ টাকা ব্যয়ে ২০০ বাচ্চা ক্রয় করে তার খামারের পরিধি বাড়ে। এর সঙ্গে বাড়িতে কবুতরও পালন শুরু করেন তিনি। এখন তার কবুতরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫টিতে।

শাহনাজ খাতুন ময়না জানান, হাঁস-মুরগির খামারের সঙ্গে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হতে চাই। এছাড়াও সহকারি মৌলভী পদে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করেছি। নিজের আয়ের বিকল্পপন্থা হিসেবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দাশেরহাটে অবস্থিত কুড়িগ্রাম হোমিওপ্যাথি কলেজে ভর্তি হয়েছি।

জানুয়ারিতে ডিপ্লোমা কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। নিজেকে দেশ সেবায় নিয়োজিত করতে ২০১৯ সালের জুন মাসে চিলমারী উপজেলার মহিলা আনসার প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। নারী আনসার প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

শাহনাজ খাতুন ময়না আরো বলেন, একজন সফল খামারি ও সফল নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ প্রকাশ করতে চাই। আমার এই আত্মকর্মসংস্থানে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সবার সহযোগিতা চাই।

জেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, নারীরা সহজে এমন আত্ম কর্মসংস্থানে উদ্যোমী কম হয়।

শাহনাজ খাতুন ময়না আত্মকর্মসংস্থানের যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে তিনি ভবিষ্যতে দেশে একজন আত্মকর্মসংস্থানের নারী মডেল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করবেন।

তিনি শাহনাজ খাতুন ময়নার ভবিষ্যত উজ্জ্বল কামনা ও তাকে সহযোগিতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান করেন।